কাজ প্রায় একই, কিন্তু... অনেক সময় বনিনবনা না হলেই ধর্ষণ হয়ে যাই যা পেপার পত্রিকায় নিত্য দেখি। নারীর স্বাধীনতা আর ক্ষমতায়ন নয় শুধু, তাদের ইজ্জতেরও মূল্যায়ন করি।
সম্মতিতে করলে ‘যিনা’ আর জোর-জবরদস্তিতে করলে ‘ধর্ষণ’। ওয়েস্টার্ন সভ্যতায় যিনাকে প্রমোট করা হয়। ফ্রি মাইন্ডে তারা ফ্রি সেক্স করে। এটা কোনো অপরাধ না। কিন্তু নারীর অনিচ্ছায় জোর-জবরদস্তিতে সেই একই কাজ করলে তা হয় Rape বা ধর্ষণ। এটা তাদের কাছে অন্যায়। এটার জন্য আন্দোলনও হয়। ‘মি-টু’ এর মতো ‘ধার্ষনিক বিপ্লব’ও হয়। কিন্তু ইসলাম? ইসলামের অবস্থান মূলত ‘যিনা’ বা adultery এর বিরুদ্ধে। ধর্ষণ বা Rape এর শরয়ি দণ্ডবিধিতে যিনার শাস্তির সাথে অতিরিক্ত হিসেবে জোর-জবরদস্তির শাস্তি, ত্রাসসৃষ্টির শাস্তি ইত্যাদি যুক্ত হয় মাত্র। সুতরাং ইসলাম উভয়টারই বিরোধিতা করে। এমন কঠোর বিরোধিতা যে, মুসলমানদের কুরআন ঘোষণা করেছে- “লা তাকরাবুয যিনা” অর্থাৎ তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর প্রেম হয়, চ্যাটিং হয়, ডেটিং হয়, শপিং হয় অসুবিধে নেই। পার্কের বেঞ্চে বসে কোলাকুলি হয়, গাছের আড়ালে পরম মমতাভরা আলিঙ্গন হয় এটাও অসুবিধে না। রাতের পর রাত আবাসিক হোটেলে অন্তরঙ্গভাবে কাটালেও কোনো অসুবিধে না। অসুবিধেটা তাহলে কী? অসুবিধে হচ্ছে, এসব করতে যেয়ে নারী যখন অতিষ্ঠ হয় তখন তার চেতনা ফেরে, সে তার ভুল কিছুটা হলেও বুঝতে পারে আর তখনি সুর তুলে ধর্ষণের। অথবা বিয়ের প্রলোভনে নিজের সবকিছু খুইয়ে যখন টিস্যু পেপারের মতো ডাস্টবিনে ফেলার উপযোগী হয়, তখনি মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় আর আওয়াজ ওঠায় ধর্ষণের।
শোনো বোন, তুমি সুযোগ দিয়েছ বলেই ও কাছে ভিড়তে পেরেছে, তুমি কোলে নিয়েছ বলেই ও মাথা পেতে ঘুমিয়েছে, তুমি বুকে ওঠিয়েছ বলেই ও তোমার সর্বনাশ করেছে। এখন তাহলে? এখন কেন ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে দাঁড় করাও? কেন নিজের অপরাধকে স্বীকারই করো না?
ওয়েস্টার্ন সভ্যতা থেকে আমদানিকৃত র্যাপকে মিডিয়া এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, “ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ” দাঁড়াতেই হবে কিন্তু “যিনার বিরুদ্ধে নীরব” থাকতেই হবে। অথচ আমাদের উচিৎ, একইসাথে ধর্ষণ ও যিনার বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহণ করা।
প্রশ্ন আসবে, শিশুদের কী দোষ? তারা কেন শিকার হচ্ছে ধর্ষণের? শুধু শিশুরা নয়, পর্দাবৃত গৃহবধূ আর বৃদ্ধারাও রেহাই পাচ্ছেন না। এমনকি সম্পূর্ণ রাইট পয়েন্টের লজ্জাবতী নারীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অহরহ। কেন? কারণ, আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যিনাকে প্রমোট করছে। আর যিনার পথ ওপেন রেখে ধর্ষণ বন্ধের স্বপ্ন ও রাজপথের আন্দোলন কতটুকু যুক্তিযুক্ত? টিভি সিরিয়ালে অশ্লীলতা, বিজ্ঞাপনে নারীর উলঙ্গপনা, পার্কের বেঞ্চে অবাধ মেলামেশা, রাস্তার মোড়ে উলঙ্গ নারীমূর্তি, লাইকি আর টিকটকের ছড়াছড়ি, ভাদাইম্মা আর মোশাররাফ করিমের সুড়সুড়িমার্কা নাটক, অনলাইন ভরা চটিগল্প ইত্যাদি বন্ধ না করে শুধু রাস্তায় গণধর্ষণের প্রতিবাদ করলেই হয়ে যাবে? ইম্পসিবল! নিরেট কল্পনা!
সুতরাং আসুন, যিনা, ধর্ষণ, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি ন্যক্কারজনক এই কাজগুলোর প্রতি উৎসাহিত করে এমন তথাকথিত কনসেপ্ট অফ ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াই। বিয়েকে সহজ করি। বাল্যবিবাহ আইন নিষিদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরি। প্রয়োজনে এজন্যও আন্দোলন চলমান রাখি। নারীর স্বাধীনতা আর ক্ষমতায়ন নয় শুধু, তাদের ইজ্জতেরও মূল্যায়ন করি।


Comments