মনিকা চাকমারা এগিয়ে যাওয়ার পেছনে কাদের অবদান রয়েছে তা তুলে ধরেছেন হিমেল চাকমা।
ম্রো আদিবাসী ব্লগ
তারিখঃ ০৬/০৬/১৯
প্রকাশিতঃ ০৯:৫০AM
লিখেছেনঃ হিমেল চাকমা
মনিকাদের সংবর্ধনা দেবার লোকের অভাব নেই; মনিকাদের সৃষ্টি করার লোকের অভাব
মনিকাকে হাইলাইট করতে গিয়ে মনিকাদের দরিদ্রকে বেশি হাইলাইট করা হয়। কিন্তু মনিকারা কেন দরিদ্র সেটা বলা হয় না। মনিকার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাস্তা নেই। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ইন্টারনেট নেই। বিদ্যুত নেই। টিভিতে মনিকার উঠে আসার গল্প বললে তাদের ঝুঁপড়ি ঘর দেখানো হয়! বার বার দারিদ্রের কথা বলা হয়। আসলে কি তাই? এ কৌতুহল থেকে মনিকাদের বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি সুমন্ত পাড়ায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিরাট অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতার কথা বললে লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে। এ কথা পরে বলছি।
মনিকা, আনু, আনাই, রুপনা, ঋতুপূর্ণাকে খুঁজতে হলে প্রথমে খুঁজতে হয় ঘাগড়া এলাকাটি। যেখানে তাদের শিকড় পড়ে আছে।
মনিকারা আজ মনিকা হয়েছে এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা ছিল ঘাগড়া মানুষের। এদের মধ্যে অন্যতম কাউখালী মগা ছড়ি স. প্রা.বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা @ Bir Sen Chakma, অন্যজন সেচ্ছাসেবী ফুটবল কোচ শান্তিমনি চাকমা @ Shanti Moni Chakma, ঘাগড়া হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক শশীমনি চাকমা @ Shashi Moni Chakma, ঘাগড়া হাই স্কুলের প্রধান চন্দ্রা দেওয়ান Chandra Dewan, বর্তমান জুরাছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা @ Koushik Chakma সহ আরো অনেকে। তাদের মত ত্যাগ কেউ করেনি এবং করে না।
মনিকারা এখনো ছুটি পেলে প্রথমে চলে আসে ঘাগড়ায়। এরপর বাড়ি যাবার চিন্তা করে। যা বছরে এক বা দুবার। বীর সেনরা না হলে মনিকা আনুরা হারিয়ে যেত পাহাড়ে ভাঁজে।
শিশু থেকে বিনা বেতনে পড়াশুনা করানো, ফুটবল অনুশীলন অব্যাহত রাখা, প্রতিযোগীতায় নিয়ে যাওয়া, ওদের ভরনপোষন সব তো ঘাগড়া থেকে করা হত।যা এখনো অব্যহত আছে। কিন্তু এদের দিকে কেউ তাকায় না। একদিন বীরসেন আমাকে বলছিলেন আরো কত মনিকা আছে! তাদের দেখছে কে? কিন্তু এখন মনিকাকে সংবর্ধনা দেবার লোকের অভাব নেই। কিন্তু আরো মনিকা সৃষ্টি করার লোকের চরম অভাব। ঠিক তো তাই।
এবার আসি লজ্জার কথায়। সেরা গোল দেওয়ার পর মনিকা ঘাগড়ায় আসে। তখন চন্দ্রা দেওয়ানকে বলি যত দুর হোক আমি মনিকাদের বাড়ি যাব। মনিকা গেলে খুব ভাল হয়। কিন্তু মনিকার পরীক্ষা। যাবার প্লান নেই। কিন্তু আমি যাব শুনে মনিকাও রাজি হল। এর কারণও আছে। মনিকা জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ার আগে থেকে আমরা হরি দা Hari Kishore Chakmaসহ তাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। এখন লক্ষীছড়ি যাবার তারিখ নির্ধারণ করলাম আমি। হঠাৎ একদিন আগিয়ে আনতে হল। সকাল সকাল মোটর সাইকেলে যাত্রা। আমাদের সাথে যাবেন ঘাগড়া হাই স্কুলের শিক্ষক শশীমনি, ফুটবল কোচ শান্তি মনি। আমার সাথে আমার ক্যামেরা পার্সন। শশীর সাথে মনিকা। শান্তির সাথে মনিকার ক্লাশমেট।
আমার যাবার উদ্দেশ্য মনিকাদের যে ঝুঁপড়ি টং ঘর দেখার সত্যতা জানা ও মনিকার উঠে আসার বাস্তব চিত্র খুঁজা।
চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা ফেলে পৌছলাম লক্ষীছড়ি রাস্তার মূখে। দেখি একদল মানুষ। খোলা ট্রাকে ব্যান্ড পার্টি! আছে মোটর বহরও। সেখানে দেখি উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি। মনিকাকে দেখে শশীর গাড়ি থেকে নামিয়ে চেয়ারম্যানের গাড়িতে তুলে নিল ওরা। উপজেলা প্রশাসন নাকি সংবর্ধনা দেবে। বেচারা শশী দা এখন অসহায়ের মত অবস্থা। রাস্তা চিনে না। এখন আস্তে আস্তে আমাদের পিছু নিলেন। লক্ষীছড়ি থানার সামনে একটি দোকানে ৪/৫ মিনিট বিরতি নিব। ওখান থেকে সুমন্ত পাড়ার রাস্তা।
এ সময় উপজেলা পরিষদ থেকে মনিকা শশীকে বলে স্যার তুই আয় না উপজেলাত !!! বুঝতে পারেন শশীমনির অবস্থা। হাজার হলেও শিক্ষক। দেখে অনুমান করা যায় বলতে পারছে না, আসব না। বলতে পারছে না আসছি।
আমি তার অবস্থা দেখে বললাম দাদা আপনি যান। কারণ কোনমতে দেরি করা যাবে না। আবার ফিরতে হবে। আমরা সুমন্ত পাড়ায় রওনা দিচ্ছি। সংবর্ধনা করারীরা এত কান্ডজ্ঞানহীন যে মনিকা উড়ে আইল? কার সাথে আসল? তার সাথে কে আসল তা জানারও প্রয়োজন মনে করেনি। এতটা অকৃতজ্ঞ হয় কিভাবে। আমাদের কথা বাদ। শশী ও শান্তিকে তো যথাযত সম্মান দিতে পারত ওরা।
আমি মনিকাকে নিয়ে যাবার উদ্যোগ না নিলে তাদের সংবর্ধনা সে বার হতই না।
যাক, আমরা গেলাম সুমন্ত পাড়ায় মনিকাদের বাড়িতে। সংবর্ধনা শেষে ঘন্টা কানেক পর ওরা পৌছল।
এখন কথা হচ্ছে আমরা গাছের আগাটি আগে খুঁজি। গোড়ার দিকে নজর দিই না। শশী ও শান্তি মনিকে অপমান করা মানে তাদের স্কুলে যে ২০ জন সম্ভাবনাময় মহিলা ফুটবলারকে ক্ষতি করা। যাঁরা কিনা মনিকাদের মনিকা বানিয়েছেন। ওদের মত ত্যাগ আমরা করতে পারব না।
আর আমরা সাংবাদিকরা মনিকাকে হাই লাইট করতে গিয়ে মনিকার দারিদ্রতাকে এমনভাবে হাইলাইট করছি যেন মনিকাকে হেয় করা সমান। যতটা দেখানো হচ্ছে ও বলা হচ্ছে ততটা নয়। সবাইকে মনে রাখা দরকার আমরা কেউ জমিদারের বাচ্চা নই। মনিকাদের বাড়িটি অনেক সুন্দর। যেটা আমাদের নেই।
এখন সবশেষ কথা হল: মনিকাকে সংবর্ধনা দেবার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু মনিকাকে সৃষ্টি করার লোকের অভাব আছে চরমভাবে।
মনিকা পড়ছেন ঘাগড়া কলেজে। কিন্তু সে কলেজটি আজকে আছে কালকে নাই এ অবস্থা। এমপিও হয়নি এখনো। হবারও লক্ষণ নেই। ফলে কোন শিক্ষক স্থায়ী হয় না।
মনিকাদের হাই স্কুল আজ বিপন্নের পথে। প্রতিরক্ষা দেওয়াল না থাকায় ভারি বর্ষণ হলে কাদায় ভরে যায় স্কুল। ডুবে যায় মনিকাদের থাকার হোস্টেল। হোস্টেলে থেকে যারা বিনা বেতন পড়াশুনা করে খেলাধুলা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য নেই কোন সরকারী বরাদ্ধ বা বিত্তবানদের সহযোগীতা। ফলে পুষ্টহীনতায় ভুগেন ভবিষ্যত মনিকারা। ধসে পড়ার শংকায় ইতিমধ্যে একটি ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। আজ যারা মনিকাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে তারা মনিকার উন্নয়নের আগে ভাবে, মনিকা যেখানে বসবাস করে এরা কার অনুসারী? একটি টিউবওয়েল দিলে এরা আমাকে ভোট দেবে তো? ভবিষ্যত মনিকা সৃষ্টি করতে আমাদের কাজ করতে হবে। যাঁরা সংবর্ধনা দিচ্ছে তাঁদের সে পরিবেশ সৃষ্টি করার সামর্থ্য আছে কিন্তু মানসিকতা নেই।
ম্রো আদিবাসী ব্লগ
তারিখঃ ০৬/০৬/১৯
প্রকাশিতঃ ০৯:৫০AM
লিখেছেনঃ হিমেল চাকমা
নামঃ হিমেল চাকমা
মনিকাদের সংবর্ধনা দেবার লোকের অভাব নেই; মনিকাদের সৃষ্টি করার লোকের অভাব
মনিকাকে হাইলাইট করতে গিয়ে মনিকাদের দরিদ্রকে বেশি হাইলাইট করা হয়। কিন্তু মনিকারা কেন দরিদ্র সেটা বলা হয় না। মনিকার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাস্তা নেই। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ইন্টারনেট নেই। বিদ্যুত নেই। টিভিতে মনিকার উঠে আসার গল্প বললে তাদের ঝুঁপড়ি ঘর দেখানো হয়! বার বার দারিদ্রের কথা বলা হয়। আসলে কি তাই? এ কৌতুহল থেকে মনিকাদের বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি সুমন্ত পাড়ায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিরাট অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতার কথা বললে লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে। এ কথা পরে বলছি।
মনিকা, আনু, আনাই, রুপনা, ঋতুপূর্ণাকে খুঁজতে হলে প্রথমে খুঁজতে হয় ঘাগড়া এলাকাটি। যেখানে তাদের শিকড় পড়ে আছে।
মনিকারা আজ মনিকা হয়েছে এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা ছিল ঘাগড়া মানুষের। এদের মধ্যে অন্যতম কাউখালী মগা ছড়ি স. প্রা.বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা @ Bir Sen Chakma, অন্যজন সেচ্ছাসেবী ফুটবল কোচ শান্তিমনি চাকমা @ Shanti Moni Chakma, ঘাগড়া হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক শশীমনি চাকমা @ Shashi Moni Chakma, ঘাগড়া হাই স্কুলের প্রধান চন্দ্রা দেওয়ান Chandra Dewan, বর্তমান জুরাছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা @ Koushik Chakma সহ আরো অনেকে। তাদের মত ত্যাগ কেউ করেনি এবং করে না।
আদিবাসী তিন ফুটবল কন্যা মনিকা চাকমা, আনাই মারমা, আনুচিং মারমা।
মনিকারা এখনো ছুটি পেলে প্রথমে চলে আসে ঘাগড়ায়। এরপর বাড়ি যাবার চিন্তা করে। যা বছরে এক বা দুবার। বীর সেনরা না হলে মনিকা আনুরা হারিয়ে যেত পাহাড়ে ভাঁজে।
শিশু থেকে বিনা বেতনে পড়াশুনা করানো, ফুটবল অনুশীলন অব্যাহত রাখা, প্রতিযোগীতায় নিয়ে যাওয়া, ওদের ভরনপোষন সব তো ঘাগড়া থেকে করা হত।যা এখনো অব্যহত আছে। কিন্তু এদের দিকে কেউ তাকায় না। একদিন বীরসেন আমাকে বলছিলেন আরো কত মনিকা আছে! তাদের দেখছে কে? কিন্তু এখন মনিকাকে সংবর্ধনা দেবার লোকের অভাব নেই। কিন্তু আরো মনিকা সৃষ্টি করার লোকের চরম অভাব। ঠিক তো তাই।
এবার আসি লজ্জার কথায়। সেরা গোল দেওয়ার পর মনিকা ঘাগড়ায় আসে। তখন চন্দ্রা দেওয়ানকে বলি যত দুর হোক আমি মনিকাদের বাড়ি যাব। মনিকা গেলে খুব ভাল হয়। কিন্তু মনিকার পরীক্ষা। যাবার প্লান নেই। কিন্তু আমি যাব শুনে মনিকাও রাজি হল। এর কারণও আছে। মনিকা জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ার আগে থেকে আমরা হরি দা Hari Kishore Chakmaসহ তাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। এখন লক্ষীছড়ি যাবার তারিখ নির্ধারণ করলাম আমি। হঠাৎ একদিন আগিয়ে আনতে হল। সকাল সকাল মোটর সাইকেলে যাত্রা। আমাদের সাথে যাবেন ঘাগড়া হাই স্কুলের শিক্ষক শশীমনি, ফুটবল কোচ শান্তি মনি। আমার সাথে আমার ক্যামেরা পার্সন। শশীর সাথে মনিকা। শান্তির সাথে মনিকার ক্লাশমেট।
আমার যাবার উদ্দেশ্য মনিকাদের যে ঝুঁপড়ি টং ঘর দেখার সত্যতা জানা ও মনিকার উঠে আসার বাস্তব চিত্র খুঁজা।
চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা ফেলে পৌছলাম লক্ষীছড়ি রাস্তার মূখে। দেখি একদল মানুষ। খোলা ট্রাকে ব্যান্ড পার্টি! আছে মোটর বহরও। সেখানে দেখি উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি। মনিকাকে দেখে শশীর গাড়ি থেকে নামিয়ে চেয়ারম্যানের গাড়িতে তুলে নিল ওরা। উপজেলা প্রশাসন নাকি সংবর্ধনা দেবে। বেচারা শশী দা এখন অসহায়ের মত অবস্থা। রাস্তা চিনে না। এখন আস্তে আস্তে আমাদের পিছু নিলেন। লক্ষীছড়ি থানার সামনে একটি দোকানে ৪/৫ মিনিট বিরতি নিব। ওখান থেকে সুমন্ত পাড়ার রাস্তা।
এ সময় উপজেলা পরিষদ থেকে মনিকা শশীকে বলে স্যার তুই আয় না উপজেলাত !!! বুঝতে পারেন শশীমনির অবস্থা। হাজার হলেও শিক্ষক। দেখে অনুমান করা যায় বলতে পারছে না, আসব না। বলতে পারছে না আসছি।
আমি তার অবস্থা দেখে বললাম দাদা আপনি যান। কারণ কোনমতে দেরি করা যাবে না। আবার ফিরতে হবে। আমরা সুমন্ত পাড়ায় রওনা দিচ্ছি। সংবর্ধনা করারীরা এত কান্ডজ্ঞানহীন যে মনিকা উড়ে আইল? কার সাথে আসল? তার সাথে কে আসল তা জানারও প্রয়োজন মনে করেনি। এতটা অকৃতজ্ঞ হয় কিভাবে। আমাদের কথা বাদ। শশী ও শান্তিকে তো যথাযত সম্মান দিতে পারত ওরা।
আমি মনিকাকে নিয়ে যাবার উদ্যোগ না নিলে তাদের সংবর্ধনা সে বার হতই না।
যাক, আমরা গেলাম সুমন্ত পাড়ায় মনিকাদের বাড়িতে। সংবর্ধনা শেষে ঘন্টা কানেক পর ওরা পৌছল।
এখন কথা হচ্ছে আমরা গাছের আগাটি আগে খুঁজি। গোড়ার দিকে নজর দিই না। শশী ও শান্তি মনিকে অপমান করা মানে তাদের স্কুলে যে ২০ জন সম্ভাবনাময় মহিলা ফুটবলারকে ক্ষতি করা। যাঁরা কিনা মনিকাদের মনিকা বানিয়েছেন। ওদের মত ত্যাগ আমরা করতে পারব না।
আর আমরা সাংবাদিকরা মনিকাকে হাই লাইট করতে গিয়ে মনিকার দারিদ্রতাকে এমনভাবে হাইলাইট করছি যেন মনিকাকে হেয় করা সমান। যতটা দেখানো হচ্ছে ও বলা হচ্ছে ততটা নয়। সবাইকে মনে রাখা দরকার আমরা কেউ জমিদারের বাচ্চা নই। মনিকাদের বাড়িটি অনেক সুন্দর। যেটা আমাদের নেই।
ফুটবলার মনিকা চাকমা।
এখন সবশেষ কথা হল: মনিকাকে সংবর্ধনা দেবার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু মনিকাকে সৃষ্টি করার লোকের অভাব আছে চরমভাবে।
মনিকা পড়ছেন ঘাগড়া কলেজে। কিন্তু সে কলেজটি আজকে আছে কালকে নাই এ অবস্থা। এমপিও হয়নি এখনো। হবারও লক্ষণ নেই। ফলে কোন শিক্ষক স্থায়ী হয় না।
মনিকাদের হাই স্কুল আজ বিপন্নের পথে। প্রতিরক্ষা দেওয়াল না থাকায় ভারি বর্ষণ হলে কাদায় ভরে যায় স্কুল। ডুবে যায় মনিকাদের থাকার হোস্টেল। হোস্টেলে থেকে যারা বিনা বেতন পড়াশুনা করে খেলাধুলা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য নেই কোন সরকারী বরাদ্ধ বা বিত্তবানদের সহযোগীতা। ফলে পুষ্টহীনতায় ভুগেন ভবিষ্যত মনিকারা। ধসে পড়ার শংকায় ইতিমধ্যে একটি ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। আজ যারা মনিকাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে তারা মনিকার উন্নয়নের আগে ভাবে, মনিকা যেখানে বসবাস করে এরা কার অনুসারী? একটি টিউবওয়েল দিলে এরা আমাকে ভোট দেবে তো? ভবিষ্যত মনিকা সৃষ্টি করতে আমাদের কাজ করতে হবে। যাঁরা সংবর্ধনা দিচ্ছে তাঁদের সে পরিবেশ সৃষ্টি করার সামর্থ্য আছে কিন্তু মানসিকতা নেই।



Comments