বাঁচার দায়ে লাক্রি বিক্রি করে আয় উপার্জন ম্রো আদিবাসীরা!
------------>
জুম চাষের পাশাপাশি নাপ্পি,লবণ কিনতে ম্রো আদিবাসী নারীরা লাক্রি বিক্রি করে থাকেন!
Mru Indigenous Blog
Published: 22 September 2019
Time: 12:12Pm
আমি ছোট থাকতে জুম চাষের পাশাপাশি আমার মা-ও লাক্রি বিক্রি করতেন। লাক্রি বিক্রি করে আমাদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন। তখন আমরা খুব গরীব ছিলাম। আমাদের নিজস্ব জায়গা জমি ছিলো না। ছিলো না ভালো একটা বাসস্থান। আমার বয়স যখন আট বছর বয়স ছিলো, তবে এর আগে থেকে আমার মা লাক্রি বিক্রি করতেন। আমার বয়স যখন ১৫-১৬ তখন থেকে আমার মা আর লাক্রি বিক্রি করেন না!
কিন্তু, আমার মায়ের অবদানে আমরা শিক্ষার আলো পেয়েছি। আমার মা লাক্রি বিক্রি করে আমরা তিন ভাইবোনকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। খাতা কলম স্কুল ড্রেসসহ ইত্যাদি খরচ আমার মা বাবা অনেক কষ্ট করে চালাচ্ছেন।
বর্তমানে আমরা মোটামুটি ভালো পর্যায়ে আছি। এখন আমাদের নিজস্ব জায়গা জমি আছে। আমাদের বিরাট বড় বাগান রয়েছে। বিভিন্ন ফলমূলের বাগান।
আমার মা যে লাক্রি বিক্রেতা তা আমি অস্বীকার করবো না। আমার মা লাক্রি বিক্রি করে আমাদের বড় গড়ে তুলেছেন। তাই আমি আমার মা-কে নিয়ে অনেক গর্বিত। আমার মা-বাবা আমাদের জন্য যে পরিমাণে পরিশ্রম করেছেন তা ভুলবার মতো নয়। মানুষের জমিতে দিন মজুরি করে আয় উপার্জন করেছেন আমার পিতামাতা। জুম চাষ করে পরিবারের অভাব মেটায়! তাই জুম চাষ ম্রো আদিবাসীদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। জুম চাষ না করলে ম্রো আদিবাসীরা কোনভাবে বেঁচে থাকার সম্ভব নয়! তাই জুম চাষের পাশাপাশি ম্রো আদিবাসী নারীরা লাক্রি বিক্রি করে থাকেন!!
আমি আমার পিতামাতা এর উপযুক্ত পুত্র হতে পেরেছি কিনা জানিনা! তবে আমি সবসময়ই চেষ্টা করি মা-বাবাকে ভালো রাখা। মা বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় গড়ে তুলেছেন। এখন আমার দায়িত্ব হইলো পিতামাতাকে বসে বসে খাওয়ানো! আমার মা-বাবা এখন ছোট বাচ্চার সমান। কারণ উনারা এখন দিনে দিনে বৃদ্ধ হচ্ছেন। বৃদ্ধ মানে তো কম বয়সের ছোট বাচ্চার সমান। তাদের অনেকগুলো আবদার থাকবে। তাদের আবদার পূরণ করা আমার ও আমার দাদার দায়িত্ব।
-------->
বেঁচে থাকার দায়ে জীবনে অনেক কিছু করতে হয়! কথায় আছে- পৃথিবীতে কোন কাজ ছোট নয়। নিজের কাজকে সম্মান করুন। নিজের পরিশ্রমে খান। কাউকে ঠকিয়ে বসে বসে খাওয়ার চেয়ে নিজের চেষ্টাই ও নিজের পরিশ্রম করে খাওয়া অনেক শান্তিপূর্ণ! লাক্রি বিক্রি করে খান, কেউ আপনাকে হাসবে না, খারাপ বলবে না! দিন মজুরি করে খান, কেউ হাসবে না।
-------->
লাক্রি বিক্রির প্রসঙ্গে আসিঃ
ম্রো আদিবাসী নারীরা দূর দূরান্ত থেকে এসে বাজারে লাক্রি বিক্রি করেন। আমি প্রায় দেখতে পায় থানছি উপজেলা আশপাশের গ্রামসহ অনেক দূরত্ব গ্রাম থেকে ম্রো আদিবাসী নারীরা থানচি সদর বাজারে লাক্রি বিক্রি করতে আসেন। সেই লাক্রি বিক্রি করে নাপ্পি, তামাক, শুটকি মাছ, লবণ ইত্যাদি আসবাবপত্র কিনে নিয়ে যায়! জুম চাষের পাশাপাশি ম্রো আদিবাসী নারীদের এই পরিশ্রম সত্যি খুবই কষ্টকর। কষ্ট করে হলেও বেঁচে থাকার দায়ে ম্রো আদিবাসী নারীরা এই কাজকে বেছে নিয়েছেন। শুধু ম্রো আদিবাসী নন, মারমা, ত্রিপুরা, বম, খুমী আদিবাসী নারীদেরকেও লাক্রি বিক্রি করতে দেখা যায়।
বিশেষ করে গরীব দুঃখী অসহায় পরিবারগুলো লাক্রি বিক্রি করে পরিবারের অভাব মেটাচ্ছে! সাধারণত ম্রো আদিবাসীরা খুব গরীব। তাই কঠিন কাজগুলোকে বেছে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ম্রো আদিবাসীরা। ম্রো আদিবাসীরা খুব সহজ সরল। তারা কখনো খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করেন না, এমনকি কাউকে ঠকিয়ে খাওয়া ম্রো আদিবাসীদের অভ্যাস নেই। তাই পাহাড়ে বড় বড় জঙ্গল কেটে জুম চাষ করেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রতিবছর ম্রো আদিবাসীরা জুম চাষ করে থাকেন। কারণ জুম চাষ না করলে তাদের বাঁচার উপায় নেই। জুমে না ধরনের ফলমূলও চাষ করেন। পাশাপাশি জায়গায় জমি বাগানও করেন ম্রো আদিবাসীরা!!
আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী মধ্য থেকে সবচেয়ে পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী হচ্ছে ম্রো আদিবাসী। পুরুষের চাইতেও ম্রো নারীরা বেশি পরিশ্রমী। ম্রো নারীদের কাজ শেষ নেই বললে চলে!! যেমন-
ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে ঝিড়িতে পানি তুলতে যায়, পানি তুলার শেষ হলে রান্নাবান্না করে কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে (মৌজা) করে রাখে যাতে ভাত ঠান্ডা না হয়ে যায়। রান্নাবান্না শেষে ভোর ছয়টায় জুম উদ্দেশ্যে রওনা দেন পরিবারের সবাই! তারপর সারাদিন জুম চাষ করে বাড়ি ফেরার পর ম্রো আদিবাসী নারীরা রাতের ভাত রান্নার পাশাপাশি ধান ভাঙ্গে এবং রাতের খাবার শেষে নয়-দশ টায় পর্যন্ত নিজস্ব সংস্কৃতি কম্বল বুনতে থাকে। পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এভাবে দিন যায় রাত যায় জীবনযাপন করেন ম্রো আদিবাসীরা!!
লিখেছেনঃ রেংহাই (Reng Hi)
------------>
জুম চাষের পাশাপাশি নাপ্পি,লবণ কিনতে ম্রো আদিবাসী নারীরা লাক্রি বিক্রি করে থাকেন!
Mru Indigenous Blog
Published: 22 September 2019
Time: 12:12Pm
আমি ছোট থাকতে জুম চাষের পাশাপাশি আমার মা-ও লাক্রি বিক্রি করতেন। লাক্রি বিক্রি করে আমাদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন। তখন আমরা খুব গরীব ছিলাম। আমাদের নিজস্ব জায়গা জমি ছিলো না। ছিলো না ভালো একটা বাসস্থান। আমার বয়স যখন আট বছর বয়স ছিলো, তবে এর আগে থেকে আমার মা লাক্রি বিক্রি করতেন। আমার বয়স যখন ১৫-১৬ তখন থেকে আমার মা আর লাক্রি বিক্রি করেন না!
কিন্তু, আমার মায়ের অবদানে আমরা শিক্ষার আলো পেয়েছি। আমার মা লাক্রি বিক্রি করে আমরা তিন ভাইবোনকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। খাতা কলম স্কুল ড্রেসসহ ইত্যাদি খরচ আমার মা বাবা অনেক কষ্ট করে চালাচ্ছেন।
বর্তমানে আমরা মোটামুটি ভালো পর্যায়ে আছি। এখন আমাদের নিজস্ব জায়গা জমি আছে। আমাদের বিরাট বড় বাগান রয়েছে। বিভিন্ন ফলমূলের বাগান।
আমার মা যে লাক্রি বিক্রেতা তা আমি অস্বীকার করবো না। আমার মা লাক্রি বিক্রি করে আমাদের বড় গড়ে তুলেছেন। তাই আমি আমার মা-কে নিয়ে অনেক গর্বিত। আমার মা-বাবা আমাদের জন্য যে পরিমাণে পরিশ্রম করেছেন তা ভুলবার মতো নয়। মানুষের জমিতে দিন মজুরি করে আয় উপার্জন করেছেন আমার পিতামাতা। জুম চাষ করে পরিবারের অভাব মেটায়! তাই জুম চাষ ম্রো আদিবাসীদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। জুম চাষ না করলে ম্রো আদিবাসীরা কোনভাবে বেঁচে থাকার সম্ভব নয়! তাই জুম চাষের পাশাপাশি ম্রো আদিবাসী নারীরা লাক্রি বিক্রি করে থাকেন!!
আমি আমার পিতামাতা এর উপযুক্ত পুত্র হতে পেরেছি কিনা জানিনা! তবে আমি সবসময়ই চেষ্টা করি মা-বাবাকে ভালো রাখা। মা বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় গড়ে তুলেছেন। এখন আমার দায়িত্ব হইলো পিতামাতাকে বসে বসে খাওয়ানো! আমার মা-বাবা এখন ছোট বাচ্চার সমান। কারণ উনারা এখন দিনে দিনে বৃদ্ধ হচ্ছেন। বৃদ্ধ মানে তো কম বয়সের ছোট বাচ্চার সমান। তাদের অনেকগুলো আবদার থাকবে। তাদের আবদার পূরণ করা আমার ও আমার দাদার দায়িত্ব।
-------->
বেঁচে থাকার দায়ে জীবনে অনেক কিছু করতে হয়! কথায় আছে- পৃথিবীতে কোন কাজ ছোট নয়। নিজের কাজকে সম্মান করুন। নিজের পরিশ্রমে খান। কাউকে ঠকিয়ে বসে বসে খাওয়ার চেয়ে নিজের চেষ্টাই ও নিজের পরিশ্রম করে খাওয়া অনেক শান্তিপূর্ণ! লাক্রি বিক্রি করে খান, কেউ আপনাকে হাসবে না, খারাপ বলবে না! দিন মজুরি করে খান, কেউ হাসবে না।
-------->
লাক্রি বিক্রির প্রসঙ্গে আসিঃ
ম্রো আদিবাসী নারীরা দূর দূরান্ত থেকে এসে বাজারে লাক্রি বিক্রি করেন। আমি প্রায় দেখতে পায় থানছি উপজেলা আশপাশের গ্রামসহ অনেক দূরত্ব গ্রাম থেকে ম্রো আদিবাসী নারীরা থানচি সদর বাজারে লাক্রি বিক্রি করতে আসেন। সেই লাক্রি বিক্রি করে নাপ্পি, তামাক, শুটকি মাছ, লবণ ইত্যাদি আসবাবপত্র কিনে নিয়ে যায়! জুম চাষের পাশাপাশি ম্রো আদিবাসী নারীদের এই পরিশ্রম সত্যি খুবই কষ্টকর। কষ্ট করে হলেও বেঁচে থাকার দায়ে ম্রো আদিবাসী নারীরা এই কাজকে বেছে নিয়েছেন। শুধু ম্রো আদিবাসী নন, মারমা, ত্রিপুরা, বম, খুমী আদিবাসী নারীদেরকেও লাক্রি বিক্রি করতে দেখা যায়।
বিশেষ করে গরীব দুঃখী অসহায় পরিবারগুলো লাক্রি বিক্রি করে পরিবারের অভাব মেটাচ্ছে! সাধারণত ম্রো আদিবাসীরা খুব গরীব। তাই কঠিন কাজগুলোকে বেছে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ম্রো আদিবাসীরা। ম্রো আদিবাসীরা খুব সহজ সরল। তারা কখনো খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করেন না, এমনকি কাউকে ঠকিয়ে খাওয়া ম্রো আদিবাসীদের অভ্যাস নেই। তাই পাহাড়ে বড় বড় জঙ্গল কেটে জুম চাষ করেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রতিবছর ম্রো আদিবাসীরা জুম চাষ করে থাকেন। কারণ জুম চাষ না করলে তাদের বাঁচার উপায় নেই। জুমে না ধরনের ফলমূলও চাষ করেন। পাশাপাশি জায়গায় জমি বাগানও করেন ম্রো আদিবাসীরা!!
আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী মধ্য থেকে সবচেয়ে পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী হচ্ছে ম্রো আদিবাসী। পুরুষের চাইতেও ম্রো নারীরা বেশি পরিশ্রমী। ম্রো নারীদের কাজ শেষ নেই বললে চলে!! যেমন-
ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে ঝিড়িতে পানি তুলতে যায়, পানি তুলার শেষ হলে রান্নাবান্না করে কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে (মৌজা) করে রাখে যাতে ভাত ঠান্ডা না হয়ে যায়। রান্নাবান্না শেষে ভোর ছয়টায় জুম উদ্দেশ্যে রওনা দেন পরিবারের সবাই! তারপর সারাদিন জুম চাষ করে বাড়ি ফেরার পর ম্রো আদিবাসী নারীরা রাতের ভাত রান্নার পাশাপাশি ধান ভাঙ্গে এবং রাতের খাবার শেষে নয়-দশ টায় পর্যন্ত নিজস্ব সংস্কৃতি কম্বল বুনতে থাকে। পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এভাবে দিন যায় রাত যায় জীবনযাপন করেন ম্রো আদিবাসীরা!!
লিখেছেনঃ রেংহাই (Reng Hi)

Comments